যদি আপনি আপনার সহনশীলতা বাড়াতে চান, তাহলে আমার দেওয়া এই সাধারন দাওয়াই টা একটু কষ্ট করে ব্যবহার করে দেখতে পারেন।
ভাবছেন, কি এটা, যা কিনা যোগ গুরুদের দেওয়া এত যোগ শক্তির থেকেও অনেক বেশি কার্যকর? না আর আমি অপেক্ষা করিয়ে আপনাদের পরীক্ষা নেব না।
কিছুই না, সাধারন পাবলিক বাস এ যদি আপনি দিন ১৫ -২০ যাতায়াত করতে থাকেন দেখবেন যে অনায়াসে আপনি কত সহনশীল হয়ে পড়েছেন।
আরে মশাই, আমার নামের পিছনে সর্বদা অধৈর্য্য নামক এক টি ট্যাগ লাগানোএকজন মানুষ আমি, কিন্তু আমি এখন কত ধৈর্য্য শীলা হয়ে গেছি নিজেই ভাবতে পারি না।
অফিস থেকে ফেরার সময় রোজ বাস এর জন্য দাঁড়াতে দাঁড়াতে আমার ধৈর্য্য অনেক বেড়ে গেছে।
এই যেমন কালকের কথাই বলি আপনাদের। প্রায় আধ ঘণ্টা দাঁড়াবার পর আমার গন্তব্যের বাস টি এল, কি ভয়ানক, গেটের কাছে মানুষ জন প্রায় বাদুর ঝোলা হয়ে ঝুলছে, আমি কি আর ছাড়ি, আমি ও গুঁতোতে গুঁতোতে বাসের পাদানি তে পা রাখলাম, কাঁধে আমার অফিস এর ব্যাগ, সেটা কে অস্ত্র করেই বাস এর সিঁড়ি দিয়ে উঠতে চাইলাম।
উঁহু, সামনের মহিলা বললেন, না না আর ওঠা যাবে না, অগত্যা সিঁড়ি তেই দাঁড়িয়ে রইলাম, এদিকে আমার পিছনে যিনি একটি পা দিয়ে ঝুলে আছেন, তিনি আমাকে সমানে বলতে থাকলেন , ও দিদি, উঠুন না, আমি তো এবার পড়ে যাব, আমিও মায়াবশত ওপরে ওঠার জন্য ক্রমাগত চেষ্টা চালাতে লাগলাম।
কিন্তু না, একটি সিঁড়িও অতিক্রম করতে পারলাম না। আমার এই ওপরে ওঠার চেষ্টা আর বোঝাই করা কলসি হাঁড়ির মত মানুষ জন কে নিয়ে বাস এর যানজট এ অবিচল থাকার মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকার এই যুগ্ম প্রচেষ্টা তে আমি ও কেমন সব কিছু ওপরওয়ালার হাতে ছেড়ে দিলাম।
এরপর বেশ কিছুটা চলার পর দু একজন বাস থেকে নামবার চেষ্টা চালাতেই আমি কেমন ভাবে যেন ওপরে উঠে গেলাম। কিন্তু একপায়ে দাঁড়াতে হল, কারন আমার দুটি চরণ রাখার জায়গা এই এত বড় বাস এ অকুলান হয়ে গেল! ওমা! বাইরে কি বৃষ্টি পরছে নাকি? বাসের চাল নিশ্চয়ই ফুটো, টুপ করে একফোঁটা জল পড়ল মনে হল, বুঝতে পারলাম পাশে দাঁড়ানো এক দাদার কথায়, এই জল টি হল পাশের পাশের জনের হাত থেকে খসে পড়া তারার মত ঘর্ম গ্রন্থি নিঃসৃত ঘর্ম বিশেষ।
বাস তার নিজস্ব গতিতে (অগতির গতি আর কি!) আর আপন ভাবনায় এগোতে লাগল।
আমি ত ভেবেই চলেছি যে কখন্ সেই মোক্ষম সময় টি আসবে, আমার দুটি চরণ একসাথে বাস এর জমি তে ঠাঁই পাবে…… এল, এল, অবশেষে সে এল, আহা…… ড্রাইভার দাদার কর্মকুশলতায় (ব্রেকের কারিকুরি আর কি!!) প্রচণ্ড একটা ঝাঁকুনি, আর ব্যাস, বোতলে ওষুধ ঝাঁকানোর মত আমারাও নিজেদের কে ঝাঁকিয়ে থিতু হয়ে গেলাম সোজা ভাবে। চলতে লাগলাম বাস এর তালে।
এরপর ধৈর্য্য নামক বস্তু টি মাথার সামনে ঘড়ির পেন্ডুলামের মত দুলতে লাগলো, কারন এখন বাস যানজট ছাড়িয়ে কন্ডাক্টর মশাই এর দড়ির টানে আর ড্রাইভার দাদার হাতের কারসাজিতে ঝিমিয়ে, ঘুমিয়ে, লোকজন কে বাড়ির রন্ধনশালা থেকে ডাকিয়ে আনার ছন্দে চলতে লাগল।
বাড়ি আসার তিন-চারটে স্টপ আসার আগে আবার সেই বিশাল ঝাঁকুনি, আর কন্ডাক্টর মশাই এর ঘন ঘন ঘন্টির দড়ির টান, পিছনে ঘূর্ণিঝড় সমান ধেয়ে আসছে এই বাস এর ই এক দুশমন, অর্থাৎ নিশ্চয়ই এতক্ষণে বুঝতে পারছেন যে সমান নাম্বার ধারী আর একটি বাস। ব্যাস, হয়ে গেল, আমরা এবার এরোপ্লেন এর গতিতে চলতে লাগলাম, ক্রমাগত ঝাঁকুনি আর ব্রেকের কারনে আমি প্রায় বাস এর হ্যান্ডল ধরে, ঠিক যে ভাবে জামাকাপড় হ্যাঙ্গার এ ঝোলানো হয়, ঠিক সেই ভাবে আমিও ঝুলতে লাগলাম। অবশেষে এসে পড়ল আমার কাঙ্ক্ষিত বাস স্টপ, টুপ করে হ্যাঙ্গার থেকে নেমে ঝুপ করে নেমে পরলাম নিজের জায়গায়।
এই হল আমার সর্ব সাকুল্যে আফিস থেকে ফেরার ২ ঘন্টার বাস যাত্রার কাহিনী।
এইবার আপানারাই বলুন, যদি আমি রোজ বিনি পয়সায় (বাসের ভাড়া তো দিতেই হবে) এই ভাবে ধৈর্য্য বাড়িয়ে তুলি, তাহলে আপানারাই বা পারবেন নে কেন? তাখন দেখবেন যে বাড়িতে, বাইরে, অফিসে আপনার সহনশীলতার কত প্রশংসা, যা আপনি কদিন এর চেষ্টাতে অবশ্যই অর্জন করতে পারেন। দেখুন তাহলে একটু চেষ্টা করে। 😀😀😀
…………………